হাতে তলোয়ার। মুখে ‘জয় মা’ ধ্বনি। হাতের সামনে যাকে পাচ্ছে, তাকেই কোপাচ্ছে হামলাকারী। রেয়াত করছে না কাউকে। তলোয়ারের কোপে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে এক একজনের শরীর। যেন শিকারি শিকার করতে বেড়িয়েছে। তলোয়ারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মানুষ কাটা গাছের মতো লুটিয়ে পড়ছে রাস্তার ওপর। মঙ্গলবার রাতের সেই রক্তাক্ত তাণ্ডবলীলায় রাস্তায় লেগে থাকা মানুষের চাপ চাপ রক্ত শুকোয়নি বুধবার সকালেও। এদিকে ওদিকে পড়ে তলোয়ারের কোপে কাটা যাওয়া মানুষের চুল। হলিউড বা বলিউডের সাইকো কিলার কেন্দ্রিক ছবির কোনও দৃশ্যের বর্ণনা পড়লেন না আপনারা। ‘সাইকো ক্রিমিনাল’-এর খপ্পরে পড়ে এভাবেই একের পর এক রক্তাক্ত হয়েছেন সাতে পাঁচে না থাকা মানুষজন।
মঙ্গলবার রাত ৯টা। দক্ষিণেশ্বরের কাছে নিবেদিতা সেতুর তলায় বরানগরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বস্তির ধারে পিকনিকে ব্যস্ত স্থানীয় লোকজন। হঠাৎ রাতের মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে তলোয়ার হাতে ওই জায়গায় উপস্থিত হয় এক যুবক। ‘জয় মা’ বলে চিৎকার করে আচমকা সে চড়াও হয় কাছাকাছি থাকা মানুষের ওপর। এলোপাথাড়িভাবে তলোয়ার দিয়ে কোপাতে থাকে লোকজনকে। একাধিক আঘাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দিতে থাকে তলোয়ারবাজ। তলোয়ারের এক কোপে কারোর হাত সে নামিয়ে দেয় কাঁধ থেকে। কাটা যায় মাথার চুল। অপরিচিত যুবকের এমন উন্মত্ত তাণ্ডবে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান বস্তিবাসী। প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে দেন।
তলোয়ারবাজের কোপের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানো কয়েকজন দ্রুত খবর দেন পুলিশকে। ততক্ষণে রক্তারক্তি কাণ্ড করে সাইকেলে চড়ে এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে ওই যুবক। ঘটনাস্থলে এসে ৬ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। যাঁদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তদন্তে নেমে গভীর রাতে বরানগরের আম্বেদকর কলোনি থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় অভিযুক্ত হামলাকারী ‘টারজান’ নামে পরিচিত। তার নামে একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতারের পর পুলিশকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে অভিযুক্ত তলোয়ারবাজ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হামলাবাজ যুবক মানসিক বিকারগ্রস্ত। তবে নিছক মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেই কি সে নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালাল? নাকি হামলার পিছনে আছে তার অন্য কোনও উদ্দেশ্য? খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হামলাবাজ ‘টারজান’-এর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রুজু করেছে বরানগর থানার পুলিশ।