সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা। ডোমকল থেকে বহরমপুর যাচ্ছিল একটি যাত্রী বোঝাই বাস। বাসে ৫৭ জন যাত্রী ছিলেন। বেশ কুয়াশা ছিল। ফলে দৃশ্যমানতা ছিল কম। বাসটি দৌলতাবাদের কাছে ভৈরব নদীর ওপর বালির ঘাট ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারায়। সজোরে ধাক্কা মারে ব্রিজের ধারের দেওয়ালে। তারপর দেওয়াল ভেঙে সোজা নদীতে গিয়ে পড়ে আস্ত বাসটা। ভৈরব নদী বেশ গভীর নদী হিসাবেই পরিচিত। যাত্রীদের মর্মান্তিক চিৎকারের মধ্যেই বাসটি সকলকে নিয়ে ক্রমশ নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদী গর্ভে হারিয়ে যায় বাসটি। ওপরে ফের শান্ত জল দেখে বোঝার উপায় নেই তার তলায় একটু আগেই তলিয়ে গেছে ৫৭ জন যাত্রী নিয়ে একটা বিশাল বাস। স্থানীয় মানুষজন নদীর ধারে ছুটে এলেও তাঁদের উদ্ধারকাজে বিশেষ কিছুই করার ছিলনা। কারণ বাসটি নদীর কত গভীরে তলিয়ে গেছে বোঝাই দায়। বাসের ৭ জন যাত্রী কোনওক্রমে ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। কিন্তু বাকি ৫০ জনের কোনও খোঁজ ছিলনা।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ এই ভয়ংকর বাস দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করে। উদ্ধারকাজ শুরু হয় ঢিমেতালে। উদ্ধার কাজে দেরির অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু হলে অনেক যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু এতক্ষণ জলের তলায় থাকার পর তাঁদের বাঁচার আশা ক্ষীণ। এই দেরির জন্য পুলিশের ওপর চড়াও হন তাঁরা। ২টি পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মারমুখী জনতাকে ঠেকাতে পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ শুরু করে। অবস্থা আয়ত্তে আনতে শূন্যে গুলিও চালানো হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসও ছোঁড়া হয়। যদিও তাতে বিশেষ ফল কিছু হয়নি। ক্ষুব্ধ মানুষজন আশপাশের বহু গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেন। চলে ইট বৃষ্টি।
বেলা যত গড়িয়েছে ততই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। বেলা ১০টা পর্যন্ত কেন ডুবুরি নামানো যায়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যদিও নদীতে নৌকায় করে ক্রেন নিয়ে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। নদীর ২ পার ধরে থিক থিক করছে মানুষ। তবে বেলা ১০টার পরও বাসটি জলের তলায় কোথায় রয়েছে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তল্লাশি চলছে।