ভোরের দিকে ব্রিজের রেলিং ভেঙে মাঝ নদীতে পড়ে গিয়েছিল নদিয়ার করিমপুর থেকে মালদহগামী যাত্রী বোঝাই বাস। নিমেষে তলিয়ে গিয়েছিল জলের তলায়। উদ্ধারকাজ শুরুর পর সেই ডুবে থাকা বাসকে উপরে তুলতে আনা হয় ক্রেন। নামানো হয় ডুবুরি। কিন্তু জলের তলার পলিতে এমনভাবে বাসটি গেঁথে গিয়েছিল যে তাকে তোলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পরপর ৩ বার ক্রেন দিয়ে তুলতে গিয়েও দড়ি ছিঁড়ে যায়। ফলে নতুন করে চেষ্টা শুরু হয়। ডুবুরি নামিয়ে বাসের সঙ্গে ক্রেনের দড়ি ফের বাঁধা হয়। যাতে অনেকটা সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। এদিকে সময় কত লাগবে তা পরিস্কার না হাওয়ায় চারপাশে আলো লাগানোর বন্দোবস্ত করে প্রশাসন। সন্ধে নামলেও যাতে উদ্ধারকাজে সমস্যা না হয়।
এদিকে খবর পাওয়ার পর থেকেই ওই বাসের যাত্রীদের আত্মীয় পরিজন ভিড় জমাতে থাকেন নদীর পারে। দু পার জুড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিলনা আশপাশের গ্রামের উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়ে। তারমধ্যেই চলে উদ্ধার কাজ। নদীর ওপর তখন অনেক নৌকা। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের বোট। তারমধ্যেই দীর্ঘ চেষ্টার পর সাড়ে ৩টে নাগাদ প্রথম বাসটিকে চোখে দেখা যায়। তখনও জলের সামান্য নিচে রয়েছে সেটি। তারপর সেটিকে কিছুটা তোলার পর চতুর্থ ক্রেনের সাহায্য নেওয়া হয়। যাতে কোনওভাবেই দড়ি ছিঁড়ে এতদূর তুলে আনা বাস ফের নদীগর্ভে চলে না যায়। বাসটিকে পুরোপুরি উপরে তুলতে কোনও হুটোপাটি না করে বরং ধীরে চলো নীতি নেন উদ্ধারকারীরা।
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বাসের অনেকটা অংশ কিন্তু জলের উপরে তোলা সম্ভব হয়। নদীর পারে তখন হাজার হাজার মানুষ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন বাসের দিকে। এদিকে বাস যতই উপরে উঠেছে ততই বাসের ভগ্নদশা চেহারা নজর কেড়েছে। জানালা ভেঙে গেছে। দরজাও তুবড়ে গিয়েছে। তারমধ্যেই উদ্ধারকারীরা উঁকি দিতে থাকেন বাসের ভিতরে। সেখানে যাত্রীদের দেহ যদি মেলে সেই চেষ্টা শুরু করেন তাঁরা। বাস আরও কিছুটা তোলার পর ৫টা নাগাদ বাসের পিছনের দিকের জানালা ভেঙে একের পর এক দেহ বার করে আনা হতে থাকে। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামে। জ্বালানো হয় আলো। সেই আলোতেই চলতে থাকে উদ্ধারকাজ। বার করে আনা হতে থাকে দেহ। মাত্র আধ ঘণ্টার ব্যবধানে উদ্ধার হয় ৩৬টি দেহ। এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। আরও দেহ আটকে রয়েছে ভিতরে।