চলন্ত ট্রেন আর একটা সেলফি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ‘কেরামতি’ দেখাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এবারে রেল লাইনে ‘শুটিং’ করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তরতাজা ২ তরুণ। মৃত এক তরুণ শৈশব দলুই বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র। অপর তরুণ সুনীল তাঁতি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়া। আর অভিনেতা হতে চাওয়া ২ বন্ধুর ক্যামেরাম্যান সৌম্যদীপ সাঁতরা বঙ্গবাসী কলেজেরই ছাত্র। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন একমাত্র তিনিই। আহত ছাত্রই পরে পুলিশকে জানিয়েছেন সোমবার বিকেলের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা।
অভিনয়ের শখ অনেকদিন থেকেই ছিল খড়দহের বাসিন্দা ২ বন্ধুর। তাই নিজেরা ‘শর্ট ফিল্ম’ বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। ছবি বানাতে গেলে চাই ঠিকঠাক ‘লোকেশন’ আর একটা ঠিকঠাক ‘স্টোরি লাইন’। গল্পের চাহিদা অনুযায়ী শৈশব দলুই, সুনীল তাঁতি ও সৌম্যদীপ সাঁতরার দরকার ছিল একটা নির্জন রেললাইন। ‘শর্ট ফিল্ম’-এর গল্প অনুসারে, এক বন্ধু অবসাদ থেকে রেললাইনে আসেন আত্মহত্যা করতে। আরেক বন্ধু সুপরামর্শ দিয়ে তাঁকে আত্মহত্যার গ্রাস থেকে বাঁচান। সেইমত দমদম-বেলঘরিয়া স্টেশনের মাঝখানে সিসিআর সেতুর রেলট্র্যাক মনে ধরে ৩ অভিন্নহৃদয় বন্ধুর। সোমবার বিকেলের দিকে ৩ জন পৌঁছে যান শ্যুটিংয়ের জায়গায়। বাড়ির লোককে যদিও এমন ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শুটিংয়ের কথা জানাননি কেউই।
গুরুতর জখম সৌম্যদীপের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে শুরুও হয়ে যায় শ্যুটিং। লাইনের একদিকে বসে সংলাপ বলছিলেন তাঁর ২ বন্ধু। আর তিনি সেই মুহুর্তটিকে রেকর্ড করছিলেন ক্যামেরায়। নিজেদের কাজে তাঁরা ৩ জনেই একেবারে ডুবে গিয়েছিলেন। তাই খেয়াল হয়নি ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা আপ বজবজ লোকালের তীব্র হুইসেলের আওয়াজ! যার পরিণতিও হল মর্মান্তিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পিছন থেকে আসা ট্রেন চোখের নিমেষে ধাক্কা মারে শৈশব ও সুনীলকে। একজনের শরীর কিছু দূর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় দুরন্ত ট্রেনের চাকা। আরেকজনের মাথায় লাগে ট্রেনের ধাক্কা। সেইসময় কোনওরকমে ট্র্যাক থেকে ছিটকে সরে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান ক্যামেরাম্যান সৌমদীপ। রেল পুলিশ ও স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ বন্ধুকে নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে শৈশব ও সুনীলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অভিনয়ের নেশায় হঠকারী প্রাণঘাতী শ্যুটিং করতে গিয়ে প্রাণ গেছে ২ পড়ুয়ার। সেই শোকে এখন বাকরুদ্ধ মৃত ছাত্রদের পরিবার ও এলাকাবাসী।