শিল্পা আগরওয়ালকে চিনি না, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে প্রথমে এমনটাই দাবি করেছিল পেশায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজেশ কুমার ও তার স্ত্রী। তাদের সেই মিথ্যার দেওয়াল অচিরেই ভেঙে পড়ে পুলিশি জেরার মুখে। একই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজ করতেন শিল্পা ও রাজেশ। তাহলে কি করে শিল্পাকে না চেনার দাবি করতে পারে রাজেশ? পুলিশের ম্যারাথন জেরার চাপে শিল্পার সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় অভিযুক্ত রাজেশ কুমার। পুলিশ জানিয়েছে, শিল্পাকে খুন করার কথাও স্বীকার করে সে। খুনের তথ্য প্রমাণ হাতে পেতে গত বৃহস্পতিবার অভিযুক্তের আসানসোলের আবাসনে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে উদ্ধার হয় লুকিয়ে রাখা মৃতার মোবাইল, জামা। এরপর অভিযুক্তকে নিয়ে রানিগঞ্জের গির্জাপাড়ায় একটি ভাড়াবাড়িতে পৌঁছয় পুলিশ। ওই বাড়িটিও রাজেশ কুমারের নামেই নেওয়া। তল্লাশি চালিয়ে ভাড়া বাড়ি থেকে মেলে চাঞ্চল্যকর কিছু নমুনা। মৃতার অন্তর্বাস, গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট, কন্ডোম ও ওড়না হাতে আসে পুলিশের।
ভাড়াবাড়ির প্রতিবেশিদের থেকে শিল্পার রাজেশের সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসার বিষয়েও সুনিশ্চিত হয় পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, বাড়িতে মিথ্যা বলে রাজেশের বেনাচিতির ফ্ল্যাটেই গিয়েছিলেন শিল্পা। খুনের দিন রাজেশের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কও হয় বলে ধারণা পুলিশের। এমনকি ওইদিন একসাথে তাঁরা খাবার খান ও মদ্যপানও করেন। সব কিছু চলছিল বটে। কিন্তু রাজেশের ওপর একটা চাপ ছিল। যে চাপটা তাকে রীতিমত চিন্তায় রেখেছিল। তা হল শিল্পার বিয়ে করার নাছোড় জেদ। রাজেশের ওপর ক্রমশ বিয়ের জন্য চাপ বাড়াচ্ছিলেন শিল্পা। সেদিন সবকিছুর পর শিল্পাকে বিয়ে করার হাত থেকে বাঁচতে তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে অভিযুক্ত। শিল্পার মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে তার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া হয় বলে অনুমান করছে পুলিশ। এদিকে শিল্পার মাথায়ও কোনও কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্তের স্ত্রী প্রথমে দাবি করে, সোমবার এসেই সে শিল্পার খুনের কথা জানতে পারে। পরে জেরার মুখে স্বীকার করে, সোমবার স্বামী ফোন করে তাকে ডেকে আনে। শিল্পার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রাজেশ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই মনোমালিন্য চরমে উঠেছিল। কিন্তু যাকে নিয়ে এত অশান্তি সেই অশান্তির কারণটাই খতম হয়ে যাওয়ায় আপোষে আসে অভিযুক্ত ও তার স্ত্রী। দুজনে মিলে ফ্রিজে রাখা মৃত শিল্পার দেহ ট্রলিতে ভরে তা সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লোক জানাজানির ভয়ে বেনাচিতির আবাসনের নিচে ট্রলিবন্দি যুবতীর দেহ ফেলে দেয় তারা।
তবে শিল্পার অবৈধ সম্পর্কের জেরে খুন হওয়ার তত্ত্ব মানতে নারাজ মৃতার পরিবার ও এলাকাবাসী। শিল্পা পরিশ্রমী মেয়ে হিসাবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, টাকার লোভ দেখিয়ে দুর্গাপুর নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে। শিল্পাকে খুনের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর ১২টা অবধি বন্ধ রাখা হয় মেজিয়া বাজারের সব দোকানপাট। শিল্পার খুনিদের ফাঁসি হোক, এই দাবিতে সরব হয়ে ওঠেন মৃতার পরিচিত ও এলাকার বাসিন্দারা।