চিলিচকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিয়ে উইম্বলডন জয়ে ইতিহাস গড়লেন টেনিসের রাজপুত্র রজার ফেডেরার। এখন পর্যন্ত উইম্বলডনে ৮ বার কাপ হাতে তোলেননি কেউ। ফেডেরার পারলেন। গড়লেন নতুন ইতিহাস। যে ইতিহাসকে ছোঁয়া সহজ হবে না পরবর্তী প্রজন্মের। সবচেয়ে বড় কথা, এখনও ফিরে আসতে চান ফেডেরার। কাপ হাতে জানিয়ে দিলেন পরের বছর ফের এই প্রতিযোগিতা জিততে চান তিনি।
এদিন সেন্টার কোর্টের ঘাসের সারফেসে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৬-৩, ৬-১, ৬-৪ সেটে কার্যত উড়িয়ে দেন রজার। মাত্র ২ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায় টেনিস দুনিয়ার সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী প্রতিযোগিতার ফাইনাল। টানটান ফাইনাল দেখতে যাঁরা কোর্টের গ্যালারি বা স্টেডিয়ামের বাইরের জায়েন্ট স্ক্রিনে চোখ রেখেছিলেন, তাঁরা এদিন কিছুটা হতাশই হলেন একতরফা একটা ফাইনাল দেখে। এদিন খেলার শুরু থেকেই চিলিচকে কিছুটা ছন্দহীন দেখিয়েছে। তাঁর অধিকাংশ রিটার্নই কোর্টের সীমারেখার বাইরে পড়েছে অথবা নেটে জড়িয়েছে। গোটা ম্যাচে একটাও লম্বা বল আদানপ্রদান চোখে পড়েনি। বরং দ্রুত ছন্দ হারিয়েছেন চিলিচ।
এদিন যদি কিছুটাও খেলা দেখিয়ে থাকেন তবে সেটা সার্ভিসে। ভয়ংকর গতির সার্ভিস অনেক সময়েই ফেডেরার দেখে ওঠার আগেই কোর্ট পার করেছে। তারপরও হয়তো লড়াই দিতেই পারতেন চিলিচ। কিন্তু প্রথম সেট হারার পরই ভেঙে পড়েন তিনি। দ্বিতীয় সেটে একটা গেমে সার্ভিস ব্রেক হতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁকে সামলাতে ছুটে আসেন কর্তারা। পায়ের ব্যান্ডেজও বদলে দিতে দেখা যায় ফিজিওকে। এত বড় একটা প্রতিযোগিতার ফাইনালে এক খেলোয়াড়কে এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়তে কমই দেখা গেছে। তখন অল ইংল্যান্ড লন টেনিস এন্ড কর্কেট ক্লাবের সম্ভ্রান্ত দর্শককুল করতালি দিয়ে তাঁকে উৎসাহ যোগান। যদিও তাতে বিশেষ কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গোটা ম্যাচে ফেডেরারের একটাও সার্ভিস ব্রেক করতে পারেননি চিলিচ।
তবে রজার ফেডেরার যে শুধু টেনিস দুনিয়ার আশ্চর্য তাই নন, একজন খেলোয়াড়, একজন মানুষ। এদিন যখন খেলার মাঝে চিলিচ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন গোটা দর্শককুল তাঁকে চিয়ার করছেন। কিন্তু পাশে বসে ফেডেরারকে সেদিকে ঘুরেও দেখতে দেখা যায়নি। কারণ তখন শুধুই খেলায় ফোকাস করেছেন। অন্যদিকে চোখ দিলে ফোকাস নড়তে পারে। তাই তখন মানবিকতা দেখানোর রাস্তায় হাঁটেননি তিনি। জোর দিয়েছেন পেশাগত মানসিকতায়।
কিন্তু সেই ফেডেরারই খেলার শেষে যেভাবে চিলিচকে অভিনন্দন জানালেন, যেভাবে নিজের জয়কে পাশে সরিয়ে বক্তব্যের প্রথমে চিলিচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন, তাতেই তিনি প্রমাণ করে দিলেন তিনি কত বড়মাপের একজন স্পোর্টসম্যান। নতুন টেনিস প্রতিভাদের জন্য এটাও একটা শিক্ষা। একজন গ্রেট প্লেয়ার সেই হয় যারমধ্যে পেশাগত মানসিকতা আর স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দুটো সমানভাবে বজায় থাকে। অভিনন্দন ফেডেরার।