ভারতীয় সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি, প্রয়াত জাকির হোসেন
বাহ তাজ শব্দটা তাঁর মুখে শোনেননি এমন ভারতীয় বোধহয় নেই। সেই কিংবদন্তী তবলা বাদক জাকির হোসেন চলে গেলেন। ভারত হারাল তার কৃতী সন্তানকে।
তবলায় বোল তুলে তারপর চায়ের কাপে আলতো চুমুক। আর সেই চুমুক দিয়েই ‘বাহ তাজ’ বলে ওঠা ঝাঁকরা চুলের ঝকঝকে সপ্রতিভ তরুণের মুখটা এখনও ভারতীয়দের চোখের সামনে ভাসে।
টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপনেও নজর কাড়া মানুষটি ছিলেন উস্তাদ জাকির হোসেন। ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক অন্যতম উজ্জ্বল তারকা তবলা বাদক উস্তাদ জাকির হোসেন চলে গেলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন।
আইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। গত ২ সপ্তাহ ধরে ভর্তি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকোর একটি হাসপাতালে।
সেখানে আইসিইউ-তেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের তরফে তাঁর প্রয়াত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
জাকির হোসেনের জীবনাবসান ভারতীয় সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি সন্দেহ নেই। জীবনে দেশ বিদেশের বহু অনন্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ৪ বারের গ্র্যামি জয়ী জাকির হোসেন পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ২০২৩ সালে।
তবলায় তাঁর আঙুল চলত ম্যাজিকের মতন। পারিবারিক সূত্রেই তিনি তবলার প্রতি আকৃষ্ট হন। বাবা ছিলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক উস্তাদ আল্লারাখা।
উস্তাদ আল্লারাখার বড় ছেলে জাকির ছোট থেকেই তবলায় তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ স্পষ্ট করে দেন। তারপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবলা বাদক হিসাবে বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি।
উস্তাদ জাকির হোসেন ছোট থেকেই তবলায় যেমন নিজের দক্ষতা তৈরি করেন, তেমনই ছিল তাঁর আত্মবিশ্বাস। তাঁর বাবাকে করা এক নিমন্ত্রণের জবাবে তিনি অনুষ্ঠান উদ্যোক্তাদের লিখে পাঠান তাঁরা বাবা পারছেন না যেতে, কিন্তু তাঁর ছেলে তাঁর জায়গায় যেতে তৈরি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সেই অনুষ্ঠানে তবলা বাজানোর ইচ্ছা প্রকাশে তিনি এতটুকু ইতস্তত বোধ করেননি। জাকির হোসেনের পরলোকগমনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে। রাজনীতি থেকে খেলা, সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে শিল্পপতি, নানা মহল থেকেই তাঁর জীবনাবসানের খবরে শোক প্রকাশ করা হয়।